‘অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত’দের বছরে খরচ ২৮০০ কোটি টাকা


বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের অধীনে ইসলামী ব্যাংকে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বেতন-ভাতায় বছরে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটি এস আলমের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত এই খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা। ব্যাংকের নথি বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বেতন-ভাতা আইনি দৃষ্টিতে বৈধ নয়, তাই অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য আদালতের পথ অবলম্বন করা উচিত।
ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনায় গত দু'দিনে ২০০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, আর ৪ হাজার ৭৭১ জনকে বিশেষ পর্যবেক্ষণাধীন (ওএসডি) করা হয়েছে। ওএসডি কর্মীদের বেতন-ভাতা অব্যাহত থাকবে, তবে তারা কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।
সূত্র জানায়, ‘অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত’ বেশিরভাগ কর্মকর্তা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং এস আলম গ্রুপের প্রভাবের সময়ে পরীক্ষা ছাড়াই চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন। ব্যাংকের মোট কর্মী সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার, যার অর্ধেকের বেশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের। ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকের মোট কর্মী ছিল ১০ হাজার।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংককে এস আলমের প্রভাবমুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় পাঁচ হাজার কর্মীর যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ পরীক্ষা আয়োজনের তারিখ ২৯ আগস্ট নির্ধারণ করেছিল। তবে কিছু কর্মী হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
পরীক্ষার দিন মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জনের মধ্যে মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। বাকি ৪ হাজার ৯৭১ জন পরীক্ষা এড়িয়ে পরদিন অফিসে হাজির হন। এদের মধ্যে ২০০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বাকিদের ওএসডি করা হয়েছে।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি, তাদের মধ্যে অতিরিক্ত উগ্র আচরণ করা ২০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাকি কর্মীদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘কর্মীদের মান যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা নেওয়া নতুন অভিজ্ঞতা। সাধারণত পদোন্নতির জন্যই লিখিত বা ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংককে এখন দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে- কেন পরীক্ষাহীনভাবে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং কেন এখন ছাঁটাইয়ের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
তবে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া কর্মকর্তাদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক তাদের ওপর পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়েছে। মোহাম্মদ ইস্কান্দার সুজন, এস এম এমদাদ হোসাইন, মোহাম্মদ ইকবাল, দিলরুবা আক্তার, শারমিন আক্তার ও নাসরিন জান্নাত নামে কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এ কারণে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
ভিওডি বাংলা/জা