তেলাপিয়া মাছ খেলে কি সত্যিই বিপদ


তেলাপিয়া মাছ খেলে কি সত্যিই বিপদ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক নারী তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু অসুস্থতাই নয়-পরবর্তীতে তার হাত-পাও কেটে ফেলতে হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব-তেলাপিয়া মাছ কি তবে বিষাক্ত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি এতটা সরল নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, আসল ঘটনা কী।
তেলাপিয়া নয়, আসল বিপদের নাম ভাইব্রিও ভালনিফিকাস
ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম. আর. করিম রেজা জানিয়েছেন, মাছ নয়, সমস্যার আসল উৎস এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া—ভাইব্রিও ভালনিফিকাস (Vibrio vulnificus)। এটি সাধারণত সি-ফুড বা সামুদ্রিক মাছের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সাধারণ খাদ্যে বিষক্রিয়ার চেয়েও ভয়াবহ সমস্যা হতে পারে।
তেলাপিয়া মাছ খেলে কি সত্যিই বিপদ
কীভাবে ছড়ায় এই ব্যাকটেরিয়া?
কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাছ বা সি-ফুড খাওয়ার মাধ্যমে
পানিতে থাকা অবস্থায় ত্বকের কাটা বা ক্ষত দিয়ে শরীরে ঢুকে
শেলফিশ ও ওয়েস্টার থেকেও এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেশি হয়
গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
লক্ষণ কী হতে পারে?
এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে:
বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, জ্বর
ত্বকে ব্যথা, লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া বা কালো হয়ে যাওয়া
গুরুতর হলে রক্তে ছড়িয়ে সেপটিক শক এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন লিভারের সমস্যা আছে বা বয়স বেশি, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
কীভাবে বাঁচবেন এই ঝুঁকি থেকে?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সবসময় মাছ ও সি-ফুড ভালোভাবে রান্না করে খান
কাঁচা বা আধা সিদ্ধ কিছু খাওয়ার ঝুঁকি নেবেন না
শরীরে কাটা বা ক্ষত থাকলে পানিতে নামা এড়িয়ে চলুন
মাছ খাওয়ার পর যদি কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে যান
তাহলে কি তেলাপিয়া মাছই বিপজ্জনক?
না, তেলাপিয়া মাছ স্বাভাবিকভাবে বিষাক্ত নয়। সমস্যা হয় যখন সেটা ভালোভাবে রান্না না করে খাওয়া হয় বা পানির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া শরীরে ঢোকে।
তেলাপিয়া হোক বা অন্য যে কোনো মাছ-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিকভাবে রান্না করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
একজনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে গুজব ছড়ানো সহজ, কিন্তু সত্যিটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। মাছ আমাদের অন্যতম স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস—তবে নিরাপদ রান্না ও সঠিক পরিচ্ছন্নতা না মানলে তা বিপদের কারণও হতে পারে।
তাই মাছ খেতে ভয় নয়, সচেতনতা ও নিরাপত্তাই হোক মূল অগ্রাধিকার।
ভিওডি বাংলা/জা