• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আগামী কাল নয়, আজকেই বাঁচার শিক্ষা

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৭ পি.এম.
আজকের মুহূর্তে মনোযোগ ও সততা, আগামী কালের ভিত্তি-ছবি সংগৃহীত

জন্মের মুহূর্ত থেকেই মানুষের চারপাশে এক অদৃশ্য শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়-‘ভবিষ্যৎ’। শিশুটি এখনো কথা বলতে শেখেনি, অথচ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কোন স্কুলে পড়বে, কোন ভাষা শিখবে, কোন পেশায় যাবে-সব কিছু যেন ঠিক হয়ে যায় জন্মের আগেই। প্রথম কান্না থেকেই শুরু হয় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা, যার নাম ‘আগামীকাল’।

বাবা-মা চায় সন্তান যেন ‘ভালো ভবিষ্যৎ’ পায়; শিক্ষক চাপ দেন পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য; সমাজ বলে, নিরাপদ পেশা নাও-ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এভাবেই জীবন পরিকল্পিত হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের নামে, অথচ বর্তমান থাকে উপেক্ষিত।

কেস স্টাডির কেন্দ্রীয় চরিত্র প্লাবন-এক সাধারণ তরুণ। জন্মের সময় তার বাবা বলেছিলেন, ‘ছেলেটাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবো’। স্কুলে শিক্ষক বলেন, ‘তুমি যদি পরীক্ষায় ভালো না করো, ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ ছোটবেলায় আকাশ দেখতে ভালোবাসত প্লাবন, কিন্তু সবাই বলত, ‘এগুলো দেখার সময় নেই, বই খোলো, ভবিষ্যৎ গড়ো।’

বছরগুলো কেটে যায় ‘ভবিষ্যৎ গড়ার’ দৌড়ে। প্রতিটি সফলতার পরও ভেতরে জমতে থাকে শূন্যতা। কারণ সবকিছু ভবিষ্যতের জন্য, আজকের আনন্দের জন্য নয়। প্রতিটি সকাল শুরু হয় ভবিষ্যতের চিন্তায়, প্রতিটি রাত ঘুমিয়ে পড়ে অনিশ্চয়তায়। একদিন প্লাবন নিজেকে জিজ্ঞেস করল, “যে ভবিষ্যতের জন্য আমি বেঁচে আছি, সেটি কখন আসবে? আমি কি কখনও সত্যিই বাঁচিনি?”

প্লাবনের গল্প শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক প্রজন্মের বাস্তবতা। আমরা জন্ম থেকে এমন সময়চক্রে বন্দি হয়ে যাই, যেখানে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনায়, বর্তমানের অভিজ্ঞতায় নয়।

মানুষ চিরকাল ‘আগামী কাল’-এর পেছনে ছুটে বেড়ায়। আজকের ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা বা ভয় থেকে বাঁচতে আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দেই-‘আগামী কাল সব ঠিক হবে’। কিন্তু আসল সত্য, সেই আগামী কাল কখনও আলাদা আসে না। প্রতিটি আগামী কাল এসে আজ হয়ে যায়, আর আমরা নতুন এক আগামী কালের অপেক্ষায় থাকি।

জীবনের আসল অলৌকিকতা হলো-সময় ধরা যায় কেবল আজকের মধ্যে। কৃষক আজ বীজ বোনে, লেখক আজ লিখে, প্রেমিক আজ ভালোবাসে। সবকিছুর মূলে আজ, যা একমাত্র নিশ্চিত ও বাস্তব সম্পদ।

তবুও মানুষ আজকে অবহেলা করে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি, ভয় পাই, অপেক্ষা করি; অথচ সেই ভবিষ্যৎ গঠনের উপাদান-আজ-নষ্ট করি। আজকের অন্যায় বা অবহেলা আগামী কালের বিপর্যয়ের বীজ বয়ে আনে। আবার আজকের সততা, পরিশ্রম, ভালোবাসা আগামী কালের আলোর উৎস।

হাইডেগার বলেছিলেন, মানুষ ‘অস্তিত্বের অপেক্ষায় থাকা প্রাণী’। রবীন্দ্রনাথও বলেন, ‘কাল যদি আসে, আজকের হাতে তারই বীজ’। তাই আজকে বাঁচতে হবে গভীরভাবে, সচেতনভাবে, সততার সঙ্গে। আজকের প্রতিটি কাজ, সিদ্ধান্ত ও অনুভূতি গড়ে তোলে আগামী কাল।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের যাত্রা একটাই প্রশ্নে এসে ঠেকে-“আমি কি আজকে বেঁচে আছি, নাকি আগামী কালের জন্য শুধু প্রস্তুতি নিচ্ছি?”

যেদিন মানুষ এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াবে, সেদিনই বোঝাবে-আগামী কাল শুধু আজকের জন্য।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন আরও ১৭৫ বাংলাদেশি
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন আরও ১৭৫ বাংলাদেশি
মালয়েশিয়ায় ১২৪ অবৈধ প্রবাসী আটক
মালয়েশিয়ায় ১২৪ অবৈধ প্রবাসী আটক
বিএনপির দলীয় সভায় বক্তব্য দিলেন জাইমা রহমান
প্রথম বারের মতো বিএনপির দলীয় সভায় বক্তব্য দিলেন জাইমা রহমান