‘সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতির স্থায়ী অভিশাপ’: কাদের গনি চৌধুরী

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতির জন্য এক স্থায়ী অভিশাপে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আয়োজিত “সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল মতপক্ষের রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা জরুরি” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের গনি বলেন, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বা পঙ্গুত্বের ঘটনা ঘটছে। এতে শুধু ব্যক্তি ও পরিবার নয়, পুরো সমাজ ও জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৮০ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৪৪৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৭ জন, আহত হয়েছেন ৬৮২ জন।
ওয়ার্ল্ড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ।
বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, সরকারিভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও অধিকাংশ মানুষ তা জানেন না। আইন অনুযায়ী নিহতদের পরিবার ৫ লাখ, অঙ্গহানিতে ৩ লাখ এবং গুরুতর আহতদের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়-যা অনেকের জন্য কঠিন। তিনি সময়সীমা ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমনসহ ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল বেআইনি হলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। ২০১৭ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা কার্যকর না হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।
বিআরটিএর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে ছয় লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে। উৎসবের সময় পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামানো ও চালকদের অতিরিক্ত কাজ করানোর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, পরিবহন খাতকে এখনো শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় চালকদের কর্মঘণ্টা, বেতন ও নিরাপত্তা নির্ধারিত নয়। টিপ ভিত্তিক আয়ে বাধ্য হয়ে তারা ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি চালান, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার, পরিবহন মালিক, চালক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যান বন্ধ, রাস্তা সংস্কার, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।
নিজেদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানি হাইওয়েতে ভটভটি বা ব্যাটারিচালিত গাড়িতে উঠা ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও উঠি। এই মানসিকতা না বদলালে কোনো আইনই কার্যকর হবে না।”
সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইন জয় জানান, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস (১ অক্টোবর) উপলক্ষে সংগঠনটি কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ে ১২০০ কর্মসূচির মধ্যে ১১৬৫টি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
তিনি জানান, নিসচা এ বছর তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে- মাদ্রাসা শিক্ষক, ইমাম ও শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত ও সংস্কার
ও জেব্রাক্রসিং ও সাংকেতিক চিহ্ন দৃশ্যমান করা।
এছাড়া চালক প্রশিক্ষণ, স্কুলভিত্তিক সচেতনতা, হেলমেট বিতরণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ ও প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, প্রতি মাসে শত শত প্রাণহানি ঘটছে সড়কে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অন্তত ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়- নির্বাচনী ইস্তেহারে সড়ক নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ভিওডি বাংলা/জা






