যশোরের চৌগাছায় ৭৬তম রাস উৎসব সম্প্রীতির মিলনমেলা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ৭৬তম রাস উৎসব এ বছরও সাড়ম্বরে উদযাপিত হচ্ছে যশোরের চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়নের দুড়িয়ালী শশ্মানঘাট সংলগ্ন এলাকায়। প্রতি বছরের মতো এবারও এই উৎসব ঘিরে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে এক আনন্দমুখর পরিবেশ, যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
রাস পূজা প্রধানত শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা-সহ গোপিনীদের প্রেমলীলা এবং ঐশ্বরিক নৃত্যকে কেন্দ্র করে এই পূজার আয়োজন করা হয়। মন্দিরগুলোতে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করে বিশেষ পূজা-অর্চনা করা হয়।
উৎসব উপলক্ষে নানা ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্ত ও শিল্পীরা পরিবেশন করছেন মন মুগ্ধকর রাসলীলা ও সংকীর্তন, যা চলে রাতভর।
রাস উৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবে বসেছে বিশাল লোকজ মেলা। এই মেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, খেলনা, মিষ্টি, এবং নানা ধরনের খাবারের পসরা, নাগরদোলনা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের লোকনৃত্য, পালা গান, যাত্রা এবং নাটকের আয়োজন করা হয়েছে।
এই উৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি চৌগাছা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলার মানুষের আগমনে সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ উৎসবে অংশ নেন, যা এলাকার মানুষের মধ্যে গভীর সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
চতুর্থ দিন রাতে রাস উৎসবে গিয়ে দেখা হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে এসকল ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থী।
রাস উৎসব কমিটির সভাপতি কেতু সরকার ও আশ্রাম কমিটির অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি রায় জানান, এ স্থানে মেলাটির ৭৬তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এটি খুলনা বিভাগে দুবলাচরের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাস উৎসব। কিন্তু প্রচার বিমুখের কারনে উপজেলাবাসীর অনেকে জানেন না এখানে এত বড় একটি উৎসব হয়।ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটে। এমনকি এখানে ওপার বাংলা (ভারত) থেকে ভক্তবৃন্দ আসেন। কিন্তু এ বছর ভিসা জটিলতার কারনে আসতে পারেনি। আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এ যাবৎ কখনও সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। তবে মেলাটির স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। মেলার সংযোগ স্থলে এক কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হওয়ার কারনে মানুষের যাতায়াতের চরম অসুিবধা হচ্ছে।
মেলায় ঘুরতে আসা পার্শ্ববর্তী কালিয়াকুন্ডি গ্রামের আলী রেজা রাজু জানান, এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও আমরা ছোটবেলা থেকে মেলাতে আসি। খুব ভাল লাগে। তবে এখান মূল সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। উৎসবের সময় বিভিন্ন রাজনৈনিক দলের নেতাকর্মীরা রাস্তা-ঘাট সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু আজও পর্যন্ত কেউ পূরণ করেননি।
মেলায় ঘুরতে আসা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, এটা সম্পর্কে পরস্পর জানতে পেরে ঘুরতে এসেছি। এটার বেশি বেশি প্রচার হওয়া প্রয়োজন।
চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী এই ৭৬তম রাস উৎসব প্রমাণ করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রতি এক মেলবন্ধন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ







