পুঁজিবাজার:
নির্বাচনী অনিশ্চয়তা ও গুঞ্জনে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৯ নভেম্বর) বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। দর বাড়ার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি শেয়ারের দাম কমেছে। এতে একদিনেই ডিএসইর সব সূচক ১ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে ৯ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন রেকর্ড হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দীর্ঘ বছর ধরেই বাজারে একটি অস্থিরতা দেখা যায়। তবে এবারের অস্থিরতা আগের সময়কার তুলনায় কিছুটা বেশিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো দল দাবি করছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার। এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পুঁজিবাজারেও আসছে। এছাড়া, সম্প্রতি মার্জিন ঋণ নিয়ে প্রকাশিত গেজেটের একটি নেতিবাচক প্রভাব বাজারে আসছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনী অনিশ্চয়তার একটি প্রভাব পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে। অতীতে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগেও এমন প্রভাব দেখা গেছে। এর সঙ্গে মার্জিন বিধিমালার গেজেট নিয়েও অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। যদিও মার্জিন ঋণের বিষয়গুলো অনেক আগে থেকেই বাজারে জানান দেওয়া হয়েছে। এটির নেতিবাচক প্রভাব এখন পুঁজিবাজারে আসার কথা নয়। তবে আতঙ্কিত এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী এটি নিয়েও গুঞ্জন ছড়াচ্ছে, যা বাজার পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে আজ।’
তবে আজকের পতনে মার্জিন ঋণের প্রভাব নেই বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তিনি বলেন, ‘মার্জিন ঋণ বিধিমালায় পুরোনোদের জন্য সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন যারা মার্জিন ঋণ নেবে তাদের জন্য কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। এখানে পুরোনোদের ঋণ সমন্বয় করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেওয়া হবে। মূলত বাজারের পতনে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে, বাজারে নতুন করে বিনিয়োগও আসছে না, আর বাজারও তার নিজস্ব গতি ফিরে পাচ্ছে না।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে আজ মোট ৩৯০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪টির। বিপরীতে কমেছে ৩২৯টির। এই দরপতন দরবৃদ্ধির চেয়ে ৯ দশমিক ৬৮ গুণ। আজ লেনদেন শেষে ২৭টি সিকিউরিটিজের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। দরপতন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৬৯টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৭২টি এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৪৪টি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে।
অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্টে বা ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯০০ পয়েন্টে নেমেছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিলো ৪ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দিনের ব্যবধানে ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৩ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৯ পয়েন্টে। আর ডিএসইর বাছাই করা ৩০ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ আগের কার্যদিবসের চেয়ে লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এদিন মোট ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন গত ২৭ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন, ওইদিন ৩৯৪ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার এক্সচেঞ্জটিতে ৪১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছিল।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক মার্জার নিয়ে অস্পষ্টতা এবং মার্জিন ঋণ-সংক্রান্ত গুঞ্জনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ধস নেমেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ডিএসই–র সূচক ও লেনদেনে।
ভিওডি বাংলা/জা







