• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাবিতে মশাল মিছিল

   ২৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৯ এ.এম.
জাবি শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের ৬দফা দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে, কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ও শিক্ষার্থীদের উপর সেনা ও পুলিশী হামলার বিচারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত পৌনে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে "নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর" ব্যানারে মশাল মিছিল শুরু হয়ে বটতলা এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের, 'সেনা ঘাটি শহরে, শিশুরা কেনো কবরে'; মাইলস্টোনে লাশ কেনো, ইউনিস জবাব দে'; 'বিমানবাহিনী জবাব দে; 'জবাব তোমায় দিতেই হবে, নইলে গদী ছাড়তে হবে'; 'রাজাকারের দালারেরা, হুশিয়ার সাবধান', 'ভারতীয় দালালেরা হুশিয়ার সাবধান'; 'ব্যারাকের বেড়ালের ব্যারাকে ফিরে যাও' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

এসময় তারা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তুলে বলেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি কাঠামোগত ব্যর্থতা ও অবহেলার ফল। তারা মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, সেনা-পুলিশি নিপীড়নের অবসান ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তী বলেন, আমরা একটা মর্মান্তিক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। যে শিশুদের আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা ছিল, সেই শিশুদের নিথর দেহ এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে। শিশুদের টিফিনবক্স ফেরত এসেছে, কিন্তু তারা আর ফিরেনি । এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।

তিনি আরও বলেন, আমরা আগেও দেখেছি বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজার ধসসহ এরকম  প্রতিটি ঘটনাই ছিল রাষ্ট্রের অবহেলার ফল। কিন্তু বারবার এমন নির্মমতা আমাদের দেখতে হচ্ছে। এই নির্মমতা আজও থামেনি। বাংলাদেশের মানুষ আজ দিশেহারা। তারা জানে না, এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর তারা কী করবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো যৌক্তিক বা শক্তিশালী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আরও দুঃখজনক হলো, এখনো নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। আমাদের জুলাই এখনো শেষ হয়নি, দেশের মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নিকি জামান বলেন, জুলাইয়ের পর থেকে আমাদের নির্মমতা বেড়ে গেছে। এখন আর রক্ত বা লাশ দেখলেও আর কিছুই মনে হয় না। বিমান দূর্ঘটনার ঘটনাস্থলে ক্রাউড নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও রাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও লাশের সংখ্যা গোপন রাখা হয়েছে, এখনো তা গোপন রাখা হচ্ছে। আমি চাই আহতরা যেন সুষ্ঠ চিকিৎসা পায় এবং নিহতদের মরদেহ যেন তাদের পরিবারে সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া রাত দশটার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আর একটি মশাল মিছিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। 

এসময় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদা মেহের আফরোজ শাঁওলির সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। 

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, উত্তরায় বিমান হামলায় অনেকে নিহত হয়েছে, বহু শিক্ষার্থী আহত। মেডিকেলে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর  জীবন আশঙ্কার মুখে। এই সরকারের কাছে জনতার জীবনের কোনো মূল্য নেই। এক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ "সংস্কার, সংস্কার" করে শুধু হুজুগ তোলা হয়েছে। সেই সংস্কারে মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আমরা আগেও দেখেছি—পুলিশ, সেনাবাহিনী জনগণের জন্য কাজ করেনি। এখনো করছে না। যদি করতো, তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাত না। ইন্টেরিম সরকার এখন লাশ গুমের রাজনীতি করছে। যদি আপনারা আগের স্বৈরাচারের পথে হাঁটেন, তাহলে আপনাদের পতন নিশ্চিত।

এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এমন বলেন, গতকালের বিমান দূর্ঘটনায় আমরা ধারনা করছি দুই শতাধিক  শিশু, শিক্ষক ও আভিভাবক নিহত হয়েছে। কিন্তু সেই জায়গায় ইন্টেরিম গতকাল থেকে নির্লজ্জের মতো বলে আসছিল ১৯ জন নিহত এবং আজকে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৯ জন। আমরা ধিক্কারের সহিত ইন্টেরিমকে বলতে চাই, যে প্রশাসনকে আমরা দুই হাজার শহিদের বিনিময়ে সরাইছি, সেই প্রশাসনের  পুনরাবৃত্তি করার মতো দু:সাহস করবেন না। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা শ্রমিক কৃষক যখন তাদের মৌলিক অধিকার ও  তথ্য নিশ্চিতের সুবিধা না পায় তখন তারা কি পরিমান ক্ষিপ্ত হয়ে সরকার ও সেই  রাষ্ট্রকে  কিভাবে ছুড়ে ফেলতে পারে সেটা আপনারা ঠিক এক বিছর আগে দেখেছেন, আপনারা ভুল করেও কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্ররোচনায় কিংবা কোনো বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় বাংলাদেশকে আগের জায়গায় দাড় করাতে চেষ্টা করবেন না।  দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনারা সঠিক নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করবেন এবং সবার প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। আমরা আজকের সমাবেশ থেকে সেই সকল শিক্ষক অভিভাবক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামিনা করছি।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য : প্রধান ফটক অবরোধ
ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য : প্রধান ফটক অবরোধ
বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় উপাচার্যের শোক
বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় উপাচার্যের শোক
শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক
শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক