• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
আজ থেকে চলবে মেট্রোরেল, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা কারাগারে নোবেলের ঈদ, বন্দিদের শোনালেন গান খালেদা জিয়া ভালো আছেন, সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন : মির্জা ফখরুল জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় উপদেষ্টা ও প্রশাসকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ার আহ্বান ইশরাকের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না: মঈন খান

শহরের নীরব ঘাতক শব্দদূষণ

   ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ পি.এম.

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তি কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলেন না, ধূমপান করলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি রোগাক্রান্ত হলেন! কারণ আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে এক নীরব ঘাতক। 

ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্ত আমাদের শরীর ও মন কোনোকিছুই রেহাই পাচ্ছে না এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে। হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, এমনকি মস্তিস্ক থেকে স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক ক্ষতি করতে পারে এই ঘাতক। এই নীরব ঘাতক কোনো অস্ত্র কিংবা বিষ নয় বরং এটি শব্দ দূষণ। এটি শুধু যে শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয় তা নয়, এটি মানবদেহে নানা ক্ষতি করে থাকে। 

অবাক করার মতো বিষয় হলো আমাদের রাজধানী ঢাকা বিশ্বে শব্দ দূষণের  শীর্ষে অবস্থান করছে। ঢাকা শহরে রাস্তায় নামলে মাঝে মাঝে মনে হয়, গাড়ি চালকেরা যেন হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কোনো কিছু সামনে পড়ে গেলেই কানফাটা শব্দে বেজে উঠছে হর্ন।

এ ছাড়া নানা উৎসব আয়োজনে উচ্চশব্দে গান বাজানো, নির্মাণ কাজ, গ্রিল-টাইলস কাটা, মেশিনে ইট ভাঙা, নানা প্রচারণায় মাইক বাজানো, জেনারেটরের শব্দে কানের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়। এই শহরের মানুষ বাধ্য হয়েই এই শব্দের তাণ্ডবের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। কিন্তু এই শব্দদূষণ কীভাবে আমাদের ক্ষতি করছে, তা আমরা সবাই জানি তো?

সেন্ট জর্জেসের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক শার্লট ক্লার্ক বলেছেন, ‘শব্দদূষণ এমন একটি জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রচুর মানুষ এই সমস্যায় পড়ে থাকেন। কিন্তু এমন একটি সমস্যা নিয়ে আমরা খুব কমই কথা বলি।’

যখনই কোনো উচ্চমাত্রার শব্দ মস্তিষ্কে পৌঁছায়, এরপর অ্যামিগডালা সেটি শনাক্ত করলে তা আমাদের নার্ভার্স সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। এতে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়।

প্রথমদিকে এতে ক্ষতি না হলেও কয়েকবছর ধরে একইরকম শব্দ শুনতে থাকলে তা মানুষের রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপ, লেভেল ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে বলে জানান অধ্যাপক ক্লার্ক। তাছাড়া এটি শ্রবণশক্তিও কমিয়ে দেয় বলে জানান তিনি। 

আরও আশঙ্কার কথা হলো, আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও শব্দ ঠিক একইভাবে আমাদের ক্ষতি করে। ক্লার্ক বলেন, ‘মানুষের কান সদা জাগ্রত। তাই আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও শব্দ শুনতেই থাকি। একারণে আশপাশে উচ্চশব্দ থাকলে তা ঘুমন্ত অবস্থাতেও ক্ষতি করে।’

আসলে শব্দদূষণ একটি অবাঞ্ছিত বিষয়। ধরুন, আপনার পাশের বাড়িতে কারো বিয়ে, তারা আনন্দ করতে গান বাজাচ্ছে। এই আনন্দ তাদের পাশাপাশি অন্যদেরও ক্ষতিসাধন করে চলে। আর এটি আমরা বুঝতেই পারি না, আবার নিজে বুঝলেও অন্যকে বুঝাতে পারি না। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য শব্দদূষণ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনাকারী গবেষক ড. মারিয়া ফোরাস্টারের মতে, শুধু ট্র্যাফিক শব্দের কারণে বার্সেলোনায় প্রতি বছর আনুমানিক ৩০০টি হার্ট অ্যাটাক ও ৩০টি মৃত্যু ঘটে।

ড. মারিয়া জানান, ইউরোপে প্রতিবছর ১২ হাজারের মতো অকাল মৃত্যু, নিদ্রাহীনতা ও নানা ধরনের মানসিক সম্যসার সঙ্গে শব্দদূষণ জড়িত। ৫৩ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দই হার্টের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ৬৫ ডেসিবেল (ডিবি) এর উপরে শব্দের মাত্রা দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে ৭৫ ডিবি ক্ষতিকারক এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যগত কারণে ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল।

বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় গ্রহণযোগ্য শব্দসীমা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিনের জন্য ৫৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৪৫ ডিবি। মিশ্র অঞ্চলে দিনের জন্য ৬০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৫০ ডিবি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের জন্য ৭০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৬০ ডিবি এবং শিল্পাঞ্চলে দিনের জন্য ৭৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৭০ ডিবি।

কিন্তু, ঢাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বাসাবাড়িতে, কর্মস্থলে, স্কুল এমনকি হাসপাতালগুলোতে বিপজ্জনক মাত্রার শব্দের সম্মুখীন হচ্ছেন। শব্দদূষণ কেন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে— এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরায়নের ফলের শহরগুলোতে এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

নিয়মিতই সম্প্রসারণ ঘটছে মেগাসিটি ঢাকার। এটি বিশ্বের অন্যতম বর্ধনশীল নগরী। যার ফলে যানবাহন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঢাকায়। আর হর্ন বাজানো সম্ভবত ঢাকার গাড়ি চালকদের একটি বড় বদভ্যাস। ট্রাফিক সিগনাল ও জ্যামে আটকে থাকার সময় সামনে এগনো যাবে না জেনেও হর্ন বাজান তারা।

ঢাকার শহরের এই শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে আন্দোলন করে অনেকের নজর কেড়েছেন শিল্পী মোমিনুর রহমান রয়াল। তিনি ‘একাকী নায়ক’ নামে পরিচিত। তিনি প্রতিদিন ঢাকার কোনো এক ব্যস্ত সড়কে ১০ মিনিট একটি হলুদ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রচণ্ড শব্দে হর্ণ বাজানো বন্ধ করতে তিনি এই কাজ করে থাকেন। 

শুধু ঢাকাই নয়, তিনি সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই এই উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো বন্ধ করতে চান। শব্দ দূষণের জন্য তিনি কেবল মানুষকেই দায়ী করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তিনি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘দুয়েক বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তবে ঢাকার শব্দদূষণ অব্যশই কমিয়ে আনা সম্ভব। কম শব্দে মানুষ যখন ভালো অনুভব করবেন, তখন নিজেরাই তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করবেন।’

তবে শব্দদূষণ দূর করা কঠিন, জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ন বল মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। এদিকে শব্দ দূষণকে ‘এক নীরব ঘাতক ও ধীরে কাজ করা বিষ’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের অধ্যাপক ড. মাসরুর আবদুল কাদের।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দেশ গড়তে নতুন সংবিধান প্রণয়ন নাকি সংস্কার
দেশ গড়তে নতুন সংবিধান প্রণয়ন নাকি সংস্কার
‘জামায়াত নিষিদ্ধ’ দাবিতে উত্তাল শাহবাগে আ.লীগ নিষিদ্ধের ঝড়
‘জামায়াত নিষিদ্ধ’ দাবিতে উত্তাল শাহবাগে আ.লীগ নিষিদ্ধের ঝড়
মৃত্যুর পর ‘অজ্ঞাত’ হয়ে যায় হাজারো মরদেহ
মৃত্যুর পর ‘অজ্ঞাত’ হয়ে যায় হাজারো মরদেহ