• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উপহার নিয়ে হাসপাতালে ইশরাক হোসেন এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় উপদেষ্টা ও প্রশাসকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ার আহ্বান ইশরাকের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না: মঈন খান ঈদের দিনেও আন্দোলনে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের বাসায় তারেক রহমানের ঈদ উপহার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা: বিবিসি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ সেনাপ্রধানের

তিন দিন ধরে বন্ধ চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল, রোগীদের ভোগান্তি

   ৩০ মে ২০২৫, ০৮:০০ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের মারামারির ঘটনায় তিন দিন ধরে বন্ধ দেশের একমাত্র চক্ষু চিকিৎসার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

বহির্বিভাগের পাশাপাশি অন্তঃবিভাগ, এমনকি জরুরি বিভাগও বন্ধ রয়েছে। অস্ত্রোপচার কক্ষ ও ওয়ার্ডগুলোতে তালা ঝুলছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও বন্ধ রেখেছে সেবা। এতে রোগীদের ভোগান্তি যেন সব সীমা ছাড়িয়েছে।

জরুরি অস্ত্রোপচারের রোগী কাতরাচ্ছের ইমারজেন্সি (জরুরি) বিভাগের বিছানায়। নেই ওষুধ। অবস্থা শোচনীয় ওয়ার্ডে থাকা রোগীদেরও। কোন ওষুধ খেতে হবে, নতুন করে কোনো ইনজেকশন ও ওষুধ খেতে হবে কিনা তাও জানেননা রোগীরা। বন্ধ রয়েছে খাবার প্রদানও। কবে সচল হবে সেই অপেক্ষায় তারা। 

শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায় সুনসান নিরবতা। হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথে পুলিশের একটি টিম ও কয়েকজন আনসার সদস্যকে দেখা যায়। ভিতরে প্রবেশ করেই জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক ও অপারেশন কক্ষে (ওটি) তালা ঝুলছে। একজন চিকিৎসক, নার্স কিংবা ওয়ার্ড বয়ও পাওয়া গেল না।

জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডে ঢুকে তিনজন রোগীকে পাওয়া গেল। তারা জানান, গত বুধবারের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক তাদের দেখেননি। অস্ত্রোপচার জরুরি হলেও অর্থের অভাবে বেসরকারিতে যেতে পারছেন না তারা।

চোখে আঘাত নিয়ে দ্বিতীয় দফায় গত ২৪ মে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হোন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪৪)। গত বুধবার তার অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসকেরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ায় আটকে অস্ত্রোপচার। কবে নাগাদ হবে জানেন না এই রোগী।

আনোয়ার হোসেন বলেন, "গত ৫ মে প্রথম এ হাসপাতালে আসি। ১৩ মে অস্ত্রোপচার হলে এক সপ্তাহ পর ইনফেকশন (সংক্রমণ) দেখা দেয়। তাই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে গত শনিবার আবারও হাসপাতালে আসি। এ দফায় অস্ত্রোপচারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চোখে দুই দিনে ছয়টি ইনজেকশন পুশ করে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়। বুধবার রিপোর্ট দেখে বেডে অপেক্ষা করতে বলেন ডাক্তার। একই দিন সকাল ১০টার দিকে ডাক্তার তার রুমে ডাকলে গিয়ে দেখি তিনিসহ অন্যান্য ডাক্তাররা কক্ষে তালা দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছেন।"

তিনি বলেন, "এরপর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বন্ধ। কোনো চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় কেউই নেই। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এমন একটা পিঁপড়াও বর্তমানে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এতগুলো রোগী যে এখানে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।"

অন্যদিকে, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে শয্যার অভাবে রোগী ভর্তি করতে বেগ পেতে হয়, সেখানে বর্তমানে পুরো হাসপাতালে সাধারণ রোগী ভর্তি ১০ জন। স্পেশাল ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন রোগীকে দেখা যায়।

এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা কাওসার আহমেদ (৫০)। তিনি বলেন, "গত মঙ্গলবার আমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। বুধবার থেকে হাসপাতাল বন্ধ। ফাইলটা নার্স স্টেশনে রেখে সবাই পালিয়েছে। অপারেশনের পর যে ওষুধ দিয়েছে সেটার ওপরই আছি। ক্যানুলা পরিয়েছে, ইনজেকশন ১২ ঘণ্টা পর পর দেওয়ার কথা। কিন্তু একবার দিয়েছে, এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর নেই। যে ইনজেকশন দিয়েছে, সেটি আবারও দিতে হবে কিনা তাও জানি না।"

কাওসার আহমেদ বলেন, "ডাক্তার ও নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। অবস্থা এমন হাসপাতাল থেকে যেতেও পারছি না, আবার থাকতেও পারছি না। মাঝে দুদিন কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। আজ সকাল থেকে খাবার এসেছে, তাও সেটি হাসপাতাল নয়, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে। পরিচালক ও ডাক্তারের নাম্বার নিয়েছি। কিন্তু কেউই ফোন ধরেনা।"

চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ভোলার তজুমদ্দিন থেকে আসা শাহিনুল আলম (১৮)। তিনি বলেন, "চোখের ছানি অপারেশনের জন্য দুই মাস আগে এ হাসপাতালে আসি। এক মাস পর সিরিয়াল পেয়ে গত ১৭ মে ভর্তি হই। গত বৃহস্পতিবার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরো হাসপাতালই বন্ধ, চিকিৎসা দেবে কে? কবে চালু হবে তাও জানি না।"

জুলাই আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীন নাজমুস শাকিব বলেন, "তিন দিন ধরে পুরো অচল অবস্থা। হাসপাতালে শুধু তো আমরা নই, সাধারণ রোগীও ভর্তি রয়েছে। অনেকের অপারেশন হয়েছে, কেউ অপেক্ষায়। ডাক্তারের কাজ যদি সেবা দেওয়া হয়, তাহলে এমন অবস্থা হবে কেন? তারা নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে দায়িত্ব ভুলে গেছে।"

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে জুলাই আহতদের তত্ত্বাবধানে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি নাবিলা বলেন, "মন্ত্রণালয়ে গতকাল আটজন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। হামলার ঘটনায় কারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্তের বিষয়টি এসেছে। পাশাপাশি আগামীকাল হাসপাতালের কার্যক্রম আগের মতো চালু হওয়ার কথা রয়েছে।"

আহতদের কার কী সমস্যা, চিহ্নিত করা গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ডাক্তারদের নতুন একটি টিম গঠন করা হবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কার কী সমস্যা, কাউকে দেশের বাইরে নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।"

জুলাই ফাউন্ডেশনের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার মাহবুব হোসেন বলেন, "সামান্য একটা ঘটনা থেকে এমন অবস্থা কাম্য নয়। জুলাই আহতদের সঙ্গে হওয়া ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল সেটির নিশ্চয়ই সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। হামলা কোনপক্ষ আগে করেছে সেটি নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। স্টাফরা যদি হাত না দিত, তাহলে এমনটা হতোনা। আমরা চাই তদন্ত হোক।"

হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর কাজী মো.মফিউল আলম বলেন, গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিষয়ে জানতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে বার্তা ও কল দিলেও সাড়া দেননি তিনি।

এর আগে গত বুধবার চিকিৎসাধীন জুলাই আহতদের সঙ্গে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে হাসপাতালের কর্মচারী, জুলাইয়ে আহত রোগী ও সাধারণ রোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন আহত হোন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসা ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে ৯ জনের করোনা শনাক্ত, ৭ জনই ‘চিকিৎসক’
রাজশাহীতে ৯ জনের করোনা শনাক্ত, ৭ জনই ‘চিকিৎসক’
ডেঙ্গুতে আরও ২২ জন আক্রান্ত
ডেঙ্গুতে আরও ২২ জন আক্রান্ত
চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে অচলাবস্থা, ভোগান্তিতে রোগীরা
চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে অচলাবস্থা, ভোগান্তিতে রোগীরা