হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন
মুসলমানদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে ভারত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারত সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশটির শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলমানকে অবৈধ অভিবাসী দাবি করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির দাবি, এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোর নাগরিক, যারা অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করেন। আটক হওয়া এসব নাগরিক নিজেদের ভারতীয় দাবি করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও হুমকির মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য হয়েছেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাস থেকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার জাতিগত বাঙালি মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠাতে অভিযান জোরদার করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলমানকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, জোরপূর্বক ঠেলে দেওয়া এসব নাগরিকের বেশিরভাগই আসাম, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের দরিদ্র শ্রমিক— যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক দাবি করলেও বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশে ফিরে ঢুকতে।
ঠেলে দেওয়া এসব নাগরিকের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বন্দুকের মুখে হুমকি-মারধর এবং কাগজপত্র ছাড়াই ঠেলে দিয়েছে— এমন অনেক অভিযোগও উঠেছে।
যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া অবৈধভাবে লোকজনকে বিতাড়ন বন্ধ ও নাগরিকদের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা ভারত সরকারের উচিত বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতীয় নাগরিকসহ বাঙালি মুসলমানদের দেশ থেকে নির্বিচারে বের করে বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে। যেভাবে সরকার ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ ঠেকানোর কথা বলছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ এতে তারা ন্যূনতম আইনগত অধিকার বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডও মানছে না।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, গত জুন মাসে তারা ৯টি ঘটনার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছেন, যাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে আবার ভারতে ফিরে আসেন।
মানবাধিকার সংস্থাটি গত ৮ জুলাই এই বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া দেয়নি।
ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য না দিলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে অন্তত ১৫০০ মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে ভারত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিজেপি শাসিত আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা ও রাজস্থানের কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, সীমান্তরক্ষীরা আটকদের নাগরিকত্বের দাবি যথাযথভাবে যাচাই না করেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করার জন্য হুমকি ও মারধর করে।
গত এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার পর পুলিশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে হয়রানি শুরু করে বলে মানবাধিকার সংস্থাটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
পুলিশ আটক মুসলমানদের হয়রানি শুরু করে, তাদের ফোন, নথি এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জব্দ করে, যার ফলে তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম হয়। আটকদের কয়েকজন বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তারা তাদের হুমকি ও লাঞ্ছিত করেছেন এবং বন্দুকের মুখে সীমান্ত পার হতে বাধ্য করেছেন।
গত মে মাসে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে আসামের একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠায় ভারত। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, আরও ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী সাগরে জোর করে নামিয়েছে, তাদের লাইফ জ্যাকেট দিয়েছে এবং তাদের সাঁতরে তীরে তুলতে বাধ্য করেছে।
এমন ঘটনাকে ‘মানবতার চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। এটি নন-রিফাউলমেন্ট নীতির সরাসরি লঙ্ঘন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী, কাউকে এমন কোনো স্থানে পাঠানো যাবে না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।
এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৮ মে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, এই ধরনের ‘পুশ-ইন’ গ্রহণযোগ্য নয় এবং শুধুমাত্র সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদেরই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মে মাসের শুরুতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠেকাতে অস্বীকৃতি জানায়। আদালতের বক্তব্য ছিল, যদি তারা ভারতের নাগরিক না হন, তবে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে। এরপর ১৬ মে আদালত রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ঠেলে দেওয়ার বিষয়টি ‘সুন্দরভাবে সাজানো গল্প’ বলে উড়িয়ে দেয়, যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনাটি অস্বীকার করেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ভারতের এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, জাতিগত বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষাকারী চুক্তির পরিপন্থি। যে কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আগে তাকে কারণ জানানোর অধিকার, আইনজীবীর সহায়তা ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়াও যারা আটক আছে, তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয় এবং নারীদের, শিশুদের, প্রবীণদের ও প্রতিবন্ধীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত।
ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল?
গত মাসে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধকে সফল বলে মনে …

ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র
আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক …

১২৩ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া
অভিবাসন সংক্রান্ত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ১২৩ বাংলাদেশিসহ …
