জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল প্রশ্নে ভিন্ন মত


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন প্রশ্নে ঐকমত্য হয়নি। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বিএনপি, সিপিবিসহ কয়েকটি দল এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অধিকাংশ দল সাংবিধানিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনসিসি গঠন জরুরি বলে জানিয়েছে।
বুধবার দুপুরে বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের তৃতীয় দিনের আলোচনার দুপুরের বিরতিতে এসব কথা জানান দলগুলোর নেতারা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে, এতে সরকারের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে মনে করে বিএনপি। যে কারণে দলটি এনসিসি ধারণার সঙ্গে একমত নয় বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে এ বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব এলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে নয় সদস্যবিশিষ্ট একটি সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব করেছে কমিশন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল কর্তৃক ডেপুটি স্পিকার নিয়ে এনসিসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এ ধারণার সঙ্গে একমত না। কারণ, এনসিসিকে সাংবিধানিকভাবে অনেক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এনসিসির জবাবদিহি নেই দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যদি অথরিটি থাকে, পাওয়ার ফাংশন থাকে, কিন্তু অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি থাকে না, সেই রকম কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা গণতান্ত্রিক পার্টি হিসেবে সমর্থন জানাতে পারি না। এই ফাংশনগুলা আলাদা করে আরেকটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার মধ্য দিয়ে একটা ইমব্যালেন্স সৃষ্ট করা হবে।’
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ যেসব নিয়োগ আছে, সেসব জায়গায় আগে যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হতো, সেখানে আমরা দেখতাম অনেকটা দলীয় নিয়োগ হতো। তাই সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ কীভাবে হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এগুলো কি আগের নিয়মেই হবে? নাকি এখানে কোনো সংস্কার চাই। আমরা বলেছি, এখানে সংস্কার চাই। এই সংস্কারের প্রস্তাবটাই এনসিসি। এ বিষয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত প্রকাশ করেছে। কয়েকটি দল এখনো একমত হয় নাই, আমরা আশা করি, তারা শিগগির একমত হবে।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘এনসিসির বিষয়ে পুরোটাতেই আমরা একমত পোষণ করেছি। শুধু একটি বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছি, প্রধান বিচারপতিকে এটার বাইরে রাখা যেতে পারে।’
মঞ্জু বলেন, নির্বাহী বিভাগের নামে সব নিয়োগ একজন ব্যক্তি, একটি দলের ইচ্ছার অধীনে চলে যায়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা এনসিসির বিষয়ে আগে থেকেই নীতিগতভাবে একমত ছিলাম। কিন্তু আজকে আমরা লক্ষ করলাম, সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে যাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, তাঁরা এখন এটির বিরোধিতা করছেন। আমরা মনে করি, এসব সংস্কারের এখনই সময়, দলীয় সরকার এই জায়গাগুলো সংস্কার করবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘এনসিসি গঠনের বিষয়ে কিছু দল পক্ষে, আর কিছু দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে যারা বিপক্ষে রয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে।’
নাহিদ বলেন, ‘এনসিসি গঠন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এনসিপির। কারণ, বিগত দিনে নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে। বিতর্কিত করা হয়েছে। বিশেষ করে, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন সব সময় সাফাই গেয়ে গেছে। আর গুম-খুন বন্ধে মানবাধিকার কমিশন কোনো ভূমিকা রাখেনি। আমরা আগের প্রক্রিয়ায় যে নিয়োগ, তা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। যারা বিরোধিতা করছেন, তাদের যদি বিকল্প কোনো প্রস্তাবনা থাকে, এই কমিশনগুলো যাতে নিরপেক্ষ থাকে, দলীয়করণ না হয়, রাষ্ট্রের সবার যাতে এই কমিশনগুলোর প্রতি আস্থা থাকে, সেই বিষগুলো যাতে নিশ্চিত করা হয়।’
নাহিদ বলেন, ‘বিগত সময়ে নির্বাহী বিভাগ বা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ক্ষমতাচর্চা করত, তা অন্যায্য ও অগণতান্ত্রিক। সেই সংস্কৃতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। সেটার জন্যই গণ-অভ্যুত্থান, সেটার জন্যই সংস্কার, সেটার জন্যই এত আলোচনা। তাই আমরা আহ্বান জানিয়েছি যে, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য যেন সবাই কাজ করে। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আমরা বলেছিলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এনসিসির এখতিয়ারে থাকা উচিত না। এটা সরকারের আওতায়ই থাকা উচিত। তাই আমরা চাই, এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে যেন সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ রাখতে হবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘রাষ্টের ৫৪ বছরের যে কর্তৃত্ববাদী শাসন তৈরি আছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য এনসিসির প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার ক্ষমতাকাঠামো, গঠন প্রণালি কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এই কাউন্সিল গঠন জাতির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু এটি যেন সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকার না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’
১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমরা বলেছি, এটা এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয়। ভবিষ্যতে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে এনসিসির প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু আরও আলোচনার ভিত্তিতে পরে এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনসিসির বিষয়ে অনেকে ঐকমত্য। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম, অনেকগুলো জোট, বড় দল এখনো ঐকমত্য হচ্ছে না।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এই মুহূর্তে সময়ের দাবি। আমরা আশা করি, ঐকমত্য কমিশন ও সরকার নির্বাচনের জন্য যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।’
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
এনসিসি ধারণার সঙ্গে একমত নয় বিএনপি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন …

এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে পৌছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও …

নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবে বিএনপি- আমিনুল হক
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি দলের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবে বলে …
